সংগ্রহ
মরক্কো ফুটবল টিম ও বাংলাদেশ ফুটবল টিম, দুই ফুটবল টিম নিয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে। এর কারণটা অযৌক্তিক না। কারণ মরক্কোর আছে একজন ফৌজি লেকজা, কিন্তু আমাদের কে আছে? তিনি কাজী সালাউদ্দিন!
ফৌজি লেকজা ২০১৪ সালে মরক্কো ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ফুটবলে তখন সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে মরক্কো। ২০১০ ফিফা র্যাঙ্কিং এ ৯৫ নাম্বার দল তারা। ২০১৪ তে ধাপ করে ৭৭ নাম্বারে৷ তারা কিন্তু ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের দল।
কাজী সালাউদ্দিন দায়িত্ব নিলেন ২০০৮ সালে ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে। ফুটবলে তখনো একটুখানি ছিলাম আমরা। তারপর আমরা ধাপ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে নেমে এলাম। আমাদের ফিফা র্যাঙ্কিং এ দেখা যায় না। অথচ ২০২২ সালে মরক্কো কোথায়? প্রশ্নটা কি বাড়াবাড়ি গেল! অবশ্যই না।
ফৌজি লেকজা একদম ঢেলে সাজালেন মরক্কো ফুটবলকে ৷ সব পুরোনো স্টেডিয়াম নতুন করে সংস্করণ করলেন।
কাজী সালাউদ্দিন সরকার থেকে টাকা নিয়ে কোন স্টেডিয়াম ঠিক করলেন? আমাদের জাতীয় ফুটবল মাঠে গরুও খেলতে চায় না। কাজী সালাউদ্দিনের এই তো আবিষ্কার, এটাই জয়। এসব আলোচনা এখন প্রতিদিনই হচ্ছে। বহু বার কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, কাজের কাজ আজও কিছুই হয়নি।
ফৌজি লেকজা মরক্কোর সব ক্লাবকে বার্ষিক ৭ লাখ ডলার অনুদানসহ প্রত্যেক প্লেয়ারকে বেতনভুক্ত করলেন ও বোনাস দেওয়া শুরু করলেন। আর্থিক সচ্ছলতা থাকলে প্লেয়ারদের খেলায় মনোযোগ আসে৷ খেলোয়াড় তৈরি হয়। বাবা-মা সন্তানকে খেলোয়াড় বানাতে চায়৷ স্বপ্ন দেখে।
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এমন অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা তার টেবিলের জন্য, চেয়ারের জন্য। কাজী সালাউদ্দিনের সফলতা বাংলার সব বাবা-মা ফুটবল থেকে ক্রিকেটে চলে গেছে। কেউ আর ছেলেকে ফুটবলার বানাতে চায় না।
ফৌজি লেকজা তারপর চোখ রাখেন তরুণদের দিকে। বিদেশের আনাচে কানাচে বড় হওয়া নিজ দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিয়ে আসলেন দেশে। তরুণরাই আগামীকালের ভবিষ্যত এটা প্রমাণ করতে খুব বেশি সময় নিলো না মরক্কো ফুটবল দল। ২০১৮ সালেই বিশ্বকাপে ফিরলেন। আর কাজী সালাউদ্দিন কোথায় ফিরলেন? কাদের ফিরিয়ে আনলেন? তরুণদের খুঁজে বের না করে সালাউদ্দিন নিজে হয়ে গেলেন তরুণ তুর্কী। টানা চারবার চেয়ার ফিরিয়ে আনলেন।
লেকজা কখনোই এটা পারবেন না। তাই কাজী সালাউদ্দিনই সেরা। মরক্কো ফুটবল টিমকে এমনভাবে সাজানো হলো। আফ্রিকান সব গরীব দেশগুলোকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হলো। মাঠ দেওয়া হলো, একাডেমি করা হলো। বাদশা মোহাম্মদ ফুটবল একাডেমি তাদের মধ্যে অন্যতম। এসবই ফৌজি লেকজার প্রশংসনীয় পরিকল্পনা। আর একটা সুন্দর পরিকল্পনা কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
আমাদের কাজী সালাউদ্দিন ১৪ বছরে কয়টা একাডেমি করতে পারলো? বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ব্যতীত আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি বাফুফের। তার জয় এটাই, তার পরিকল্পনা এটাই।
২০১০ সালেও যে মরক্কো দলটা ছিলো ফিফা র্যাংকিং এর ৯৫ নাম্বারে তারা এখন বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দাবিদার। আর কাজী সালাউদ্দিন ২০১০ সালে কথা দিয়েছিলেন আমরা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ খেলবো। তিনি কথা রেখেছেন। ২০১০ সালে আমাদের ফিফা র্যাঙ্কিং ছিলো ১৫০ আর এখন ১৮৮।
ঠিক আছে না?
মরক্কো সেমি ফাইনাল খেললো। আর আমরা হয়তো নতুন মিশন শুরু করবো। কাজী সালাউদ্দিন মিশন। যেটা তার মৃত্যুর আগে শেষ হবে না।
জয় সালাউদ্দিন… জয় বাংলাদেশ ফুটবল। ফুটবল নিয়ে বাঙ্গালীদের আবেগ বুঝবে না কোনদিন এরা?
আশরাফ হাকিমি, নোসাইর মাজরাওই, আব্দেলহামিদ সাবিরি কিন্তু আমাদের দেশের আনাচে কানাচেও আছে। আমরা তাদের দেখতে পারবো কবে? কাজী সালাউদ্দিন দেখতে দিবে তো?
আমাদের একটা ফৌজি লেকজা আসবে কবে? আমরা কি লাল সবুজ পতাকা হাতে গ্যালারিতে বসে চিৎকার করতে পারবো না কোনদিন?